JOIN OUR NEWSLETTER NOW
will be used in accordance with our Privacy Policy
সালমান শাহ্: ক্ষণজন্মা এক মেধাবী তরুণ মহাতারকা
- Posted by Masud Rana Nakib
- 0 comments
লিখেছেন | মাসুদ রানা নকীব
এলেন, দেখলেন, জয় করলেন।
রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করা কিংবদন্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত এ কথা। কিন্তু চিত্রনায়ক সালমান শাহ্’র ক্ষেত্রে?
এলেন, দেখলেন, জয় করলেন আবার বড়ো অকালে চিরতরে চলেও গেলেন। পৃথিবীতে এত অল্প সময়ে খ্যাতির উচ্চ শিখরে এসে এভাবে চলে যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তাই তাঁর এভাবে চলে যাওয়া এখনো মানুষের মনে বিদ্ধ করে। চলে গেলেন তিনি। আর চলে গিয়ে বলে গেলেন তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে অনেক ব্যতিক্রম এবং ক্ষণজন্মা এক মেধাবী তরুণ মহাতারকা।
আজ এই মহাতারকা সালমান শাহ্’র ৪৯তম জন্মদিন।
যে মহাতারকার প্রতি এখনকার অনলাইন প্রজন্মেরও ব্যাপক আগ্রহ, উন্মাদনা দেখতে পাই। অথচ এদের অনেকের জন্ম হয়েছে সালমান শাহ্’র রহস্যজনক অকাল মৃত্যুর অনেক পর। তবুও তারা ইউটিউবে সালমান শাহ্ অভিনীত নাটক, সিনেমা দেখে। তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ফ্যাশন সচেতনতা ও তাঁর নানা ধরণের স্টাইল দেখে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, গুগল এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর স্টাইলিশ লুকের অসংখ্য ভিউকার্ড, ছবি দেখে দেখেই এখনকার তরুণ-তরুণীরা নিজেদেরকে চিত্রনায়ক সালমান শাহ্’র ভক্ত বলে দাবি করেন। এবং তাদের ফেসবুক প্রোফাইল, কভার ছবিতেও প্রিয় এই নায়কের ছবি দিয়ে রাখেন। আর এভাবেই ক্ষণজন্মা এই নায়কের প্রতি তাঁর ভক্তদের আগ্রহ, উন্মাদনা ও ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
চিত্রনায়ক সালমান শাহ্ এভাবেই তাঁর ভক্তদের অন্তরে অন্তরে চির অমর হয়ে থাকবেন এটাই সত্যি।
উজানতলির কথা
- Posted by Tokon Thaakoor
- 0 comments
লিখেছেন | টোকন ঠাকুর
এক হারানো দেশের গল্প দেখতে পাই 'উজানতলি' স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটিতে।
পশ্চিমবঙ্গের নগর কোলকাতার দুটি ছেলেমেয়ে সীমান্তের নদীপাড়ে এসে একটি নৌকা ভাড়া করে। তারা নদীর বাংলাদেশ-পাড়ে ঘুরতে যায়। এপার-ওপারের গল্প।
তাদের কাছে মোবাইল ফোন আছে, ল্যাপটপ আছে। তারা হয়তো ছবি নির্মাণের জন্যে লোকেশন রেকি করতে চায়। এবং আমরা দেখি যে, ল্যাপটপের মধ্যে আছে ঋত্বিক ঘটক, আছে ‘কোমলগান্ধার’। ফলত, নদীপাড়ে বিজন ভট্টাচার্য তার দরাজ আবেগী গলায় কম্পন তুলে ঠিকই ধরলেন, ”এপার পদ্মা ওপার পদ্মা রে, মাঝে জাগনার চর/ তারি পরে বইসা আছেন শিবু সওদাগর।’
উজানতলি – Ebby Tune
স্ক্রিপ্টরাইটার ও ডিরেক্টর । সোম চক্রবর্তী
ফিল্ম এডিটর | প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য
সিনেমাটোগ্রাফার । সুভাদীপ দে
প্রডিউসার । তমাল চক্রবর্তী
কাস্ট । শ্রীমতি চন্দনা চ্যাটার্জি; অভিরূপ ভট্টাচার্য; বৃষ্টি রায়
ব্যাপ্তিকাল । ২৬ মিনিট
ভাষা । বাংলা
দেশ । ভারত
মুক্তি । ২০১৪ (ভারত)
নৌকা চলে নদীতে, নৌকা চলে কাশবনের ভেতর দিয়ে। ভয়েসওভারে রাজকুমারির গল্প, দৈত্যের গল্প, রাজার গল্প বা সেই হারানো দেশের গল্প। যে-দেশ একটি হারানো দেশ। নদীর ওপরে আকাশে মেঘ, নানান রঙের মেঘ, নিচে কাশবন, নৌকা চলতে থাকে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেষে।
মাঝির কথা থেকে জানা যায়, করিমপুর, পেয়ারাডোবা, নয়ানজুলি, উজানতলি জলে ডুবে গেছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে বন্যা চলছে। ক্ষেতের ফসল ডুবে গেছে।তো বাংলাদেশের অগণন মানুষের জীবন বিপর্যস্থ। উৎকণ্ঠা বাড়ে ছেলেমেয়ে দুজনের, বেশি উৎকণ্ঠিত দেখি আমরা তাকে, যিনি নৌকার আরেক যাত্রী, এক বয়স্কা নারী, যার বাড়িই একদা ছিল উজানতলিতে। সেই কোন কিশোরীকালে যে পিতার হাত ধরে ছেড়ে এসেছে উজানতলি। দেশভাগের আর্তি ফুটে ওঠে এইখানে, যাকে এপিক করে ধরে রেখেছেন ১৯২৫ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা ও পরে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে বড় হওয়া ঋত্বিক ঘটক। এবং ১৯৪৭ এর দেশভাগের পর ঘটক হয়ে গেলেন ভারতীয়, যদিও তার যমজ বোন প্রতীতি দেবী থেকে গেলেন কুমিল্লায়, ঢাকায়, বাংলাদেশে।
প্রতীতি দি প্রয়াত হলেন গতবছর, ৯৪ বছর বয়সে। যমজ ভাইবোন যে দুই দেশের নাগরিক হতে পারে, আমরা দেখলাম। ‘উজানতলি’ ছবিতেও কিশোর-কিশোরীর ছবি ধরা হয়েছে। ‘নেইম ওফ আ রিভার’ এ অনুপ সিং ধরেছেন তার মতো করে। কমলেশ্বর মুখার্জি ‘মেঘে ঢাকা তারা’তে ধরেছেন তার মতো। ‘উজানতলি’তেও আমরা দেখি, মায়াবী বাল্যকাল বাগানের গাছে গাছে দুলে দুলে উঠছে। দুলে উঠি আমরাও, দর্শক হিসেবে। ভালো লাগে। সত্যি, এ ছবির সিনেমাটোগ্রাফি কী সুন্দর। ছবির মতো সুন্দর।
দেশভাগের পর নদী সীমান্তরেখা হয়ে গেছে। নগর কোলকাতার কয়েকজন থিয়েটারকর্মী এসেছে নদীর পাড়ে, যার ওপারেই বাংলাদেশ বা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান। থিয়েটার দলের অস্থির ও বিষণ্ণ নির্দেশক, যুবক ভৃগু তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের গ্রামটির দিকে। দলের নতুন সদস্যা যুবতী অনুসূয়াকে ভৃগু বাংলাদেশের একটি গ্রাম দেখিয়ে বলে, ‘ওই যে আমাদের গ্রাম, ওখানেই আমাদের বাড়ি ছিল কিন্তু কোনোদিন আমি আর ওখানে পৌঁছতে পারব না। চরম এক হতাশার অতল থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারা দেশভাগের যাতনার আখ্যান বলে দেয় কয়েকটি সংলাপে। এই দৃশ্য আমরা পুনরায় দেখতে পাই ‘উজানতলি’র মধ্যে। ‘উজানতলি’ গ্রামের সেদিনের কিশোরী, আজ যিনি ভারতীয় এক বয়স্কা নারী, যিনি বলেন, ‘আমি না রইলাম ওই দেশের, না হইলাম এই দেশের’ তার এই কথার মধ্যে যে মর্মর ধ্বনি আছড়ে পড়ে আমাদের মনোজগতে, তার জন্যে দায়ী কে?
নৌকাযাত্রী বয়স্কা নারীকে প্রশ্ন করে মেয়েটি, ‘আচ্ছা মাসিমা,আপনি কি এখনো এই দেশকে (ভারত) ভালোবাসতে পারেননি? এতদিন তো হয়ে গেল!’ নিজের দেশ ছেড়ে আসা বয়স্ক নারী বলেন, ‘ভালোবাসি এই দেশটারেও। এটা তো আমার পর ভুঁই।’ কিন্তু ছেলেটি এক কাঠি বেশি শ্লেষ মেখে প্রশ্ন করে, ‘এই দেশে এমন বন্যা হলে কানবেন এমন করে?’ মাসি উত্তর না দিয়েই নৌকা থেকে নেমে পড়েন। তখন ছেলেটি আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ‘কি হলো মাসিমা, উত্তরটা দিলেন না?’ হায়রে দেশভাগ!
হিমালয় দুহিতা নদী ভারতের ভেতর দিয়ে এসে বাংলাদেশে পড়েছে। তারপর নদীগুলো চলে গেছে বঙ্গোপসাগরে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪ টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গত ৭০ বছর ধরেই ভারত এই নদী-রাজনীতি অব্যহত রেখেছে। যেমন, ভারতীয় ফারাক্কা বাঁধের কারণেই বাংলাদেশের অসংখ্য নদী মরে মরুভূমি হয়ে গেছে। আবার বর্ষা মৌসুমে ভারত সব বাঁধ খুলে দেয়। এতে করেই বাংলাদেশ ডুবে যায়, বন্যা হয়। ‘উজানতলির মাসিমা তো এই রাজনীতি বুঝবেন না, বুঝবে ভারতীয় প্রশাসন, বিশেষ করে পশ্চিম বাংলা রাজ্য সরকার। অথচ নদী প্রাকৃতিক। তারপরও ভারত এই দাদাগিরির রাজনীতি জারি রেখেছে, আর বাংলাদেশ বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিবছর। কাজেই উজানতলির মাসিমার চেয়ে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে ‘উজানতলি’ ছবির পরিচালককে। কিছুমাত্র বুঝবেন কি?
এইখানেই ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে পশ্চিম বাংলার আর সব কবি-সাহিত্যিক-সিনেমাওয়ালার পার্থক্য। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনেও সেই একই সমস্যা। আজ আর বলাও যাবে না, ‘তিতাস একটি নদীর নাম।’ আজ ‘তিতাস একটি বালিয়াড়ির নাম’ ভারতীয় অকল্যাণকর রাজনীতির কারণে। জানি না, কোনোদিন পশ্চিম বাংলা বা ভারতীয় কোনো শিল্পী বা পরিচালক এই রাজনীতি নোটিস করতে সমর্থ হবেন কিনা!
তারপরও ‘উজানতলি’র নির্মাতা সোম চক্রবর্তী কে ধন্যবাদ জানাই, এ কারণে যে, ‘উজানতলি’র নির্মিতির জন্যে। সেই নির্মিতি না হলে আমিই বা এই লেখা লিখতাম কী করে?
চলচ্চিত্র পরিবেশনা এবং বিপণন (পর্ব-০২)
- Posted by Khandaker Sumon
- 0 comments
লিখেছেন | খন্দকার সুমন
মাধ্যমিক বিদ্যা
চলচ্চিত্রের আঞ্চলিক পরিবেশনা এবং বিপণন নিয়ে কথা উঠলেই দু’টি আলোচনায় বিভক্ত হতে দেখেছি। একদল বলছেন, "আগে ভাল চলচ্চিত্র তবেই দেশে চলচ্চিত্রের বাজার তৈরী হবে"। আবার আর একদল বলছেন, "না, আগে ভাল পরিবেশনা এবং বিপণন ব্যবস্থা হলেই কেবল ভাল চলচ্চিত্র আসবে"। এই যে “ডিম আগে না মুরগী আগে” এমন 'বৃত্তে আটকা' আলাপে না থেকে চলচ্চিত্র পরিবেশনা এবং বিপণন নিয়ে আলাপ এগিয়ে নিতে চাই। কারণ এতটুকু কথা লিখতে লিখতেই বিশ্ব আরও কিছুটা এগিয়ে গেল।
এই ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্বে বলেছিলাম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনেক আগেই পেক্ষাগৃহে প্রদর্শনীর অধিকার হারিয়েছে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই। আটের দশকে বিকল্পধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এদেশের সাধারণ দর্শকদের কাছে মুক্তদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র যা কিনা ব্যবসায়ী প্রদর্শকদের কথিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সাথে পরিচয় ঘটে। মুক্তদৈর্ঘ্য হচ্ছে সেই চলচ্চিত্র যা নির্মাণে নির্মাতা দৈর্ঘ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং চলচ্চিত্রটি সত্যিকার অর্থে যে দৈর্ঘ্যে শেষ হওয়া উচিৎ ঠিক সেই দৈর্ঘ্যেই শেষ হয়।
এবার ইতিহাস থেকে বেড় হয়ে বর্তমান পেক্ষাপটে আঞ্চলিক পেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র পরিবেশনার বিষয়ে আসা যাক। প্রথমে জেনে নেয়া যাক কি কি প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্র পেক্ষাগৃহ পর্যন্ত পৌঁছায়।
বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনকে সরকারি এবং বেসরকারী ভাবে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বলা হয়। এই ফিল্ম ডেভেলপ বলতে মূলত একটি ল্যাব-এ কিছু রাসায়নিক কর্মকান্ড বুঝায়। যেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ফিল্ম ডেভেলপ করা হত। “হত” বলতে এজন্য বলছি কারণ এখন আর ফিল্ম ডেভেলপ হয় না। ডিজিটাল সিনেমা ক্যামেরা বাজার দখলের পর ক্যামেরার ফিল্ম উৎপাদন কম্পানী গুলো ফিল্ম উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তাহলে ফিল্ম না থাকলে ফিল্ম ডেভেলপ ল্যাব কোন কাজে আসে না। কিন্তু বিপদ হলো সিনেমার ফিল্ম ক্যামেরার একটি ফিল্ম ডেভেলপ করার ল্যাবের বঙ্গানুবাদ করা হল চলচ্চিত্র উন্নয়ন। সিনেমা ক্যামেরার ফিল্ম আর আর চলচ্চিত্র/সিনেমা/ফিল্ম/মুভি এক জিনিস নয়।
এই একটি ভুল অনুবাদের জন্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন বিষয়ে নানান অনধিকার চর্চা করে আসছে কর্পোরেশনটি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের বাহিরে থেকেও যদি একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় তবে তা সেন্সর বোর্ডে সেন্সর সনদ নিতে গেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র কর্পোরেশনের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ছাড়পত্র সহ জমা দিতে হবে। যদিও তথ্য মন্ত্রণালয় অধীনের বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ড যে আইন দ্বারা পরিচালিত সেখানে এমন কোন আইন নেই।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে ছাড়পত্র নিতে হলে দশ হাজার টাকা ফি জমা দিতে হবে। তারা জানতে চাইবে আপনি কে? আপনি কি প্রযোজক সমিতির সদস্য? এরপর আপনাকে প্রযোজক সমিতির সদস্য হতে সমিতিতে যেতে হবে। প্রযোজক সমিতিতে লক্ষাধিক টাকার ফি জমা দেয়ার পর প্রশ্ন আসবে এই চলচ্চিত্রের পরিচালক কি পরিচালক সমিতির সদস্য? এরপর আবার লক্ষাধিক টাকা দিয়ে পরিচালক সমিতির সদস্য পদের জন্য আবেদন করতে হবে। যদিও চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি দাবি করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ছাড়পত্র নিতে কেবলমাত্র প্রযোজক সমিতিতে নিবন্ধিত হলেই চলবে। কিন্তু পরিচালক সমিতি বলছে তাদের সদস্য পদও নিতে হবে নইলে ছাড়পত্র দেয়া হবে না। পত্র-পত্রিকায় দুই সমিতির এমন বক্তব্য প্রায়ই পাওয়া যায়। উল্লেখ থাকে যে এগুলো কোনটিরই আইনগত ভিত্তি নেই। এগুলো সবই ফিল্ম ডেভেলপ করা একটি ল্যাবের বঙ্গানুবাদ চলচ্চিত্র উন্নয়ন বলার দখলদারিত্ব।
ধরে নিলাম সব কাগজ জমা দেয়ার পর ১৯৬৩ সালের চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন এবং ২০০৬ সালের দি ফিল্ম সেন্সরশিপ (এমেন্ডমেন্ট) আইন পার হয়ে চলচ্চিত্রটি সেন্স বোর্ডের সনদ অর্জন করেছে।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র পরিবেশনার আগে এতগুলো বিষয় বলার উদ্দেশ্য হল, তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ডের সনদ ছাড়া কোন চলচ্চিত্র পেক্ষাগৃহে প্রদর্শনী সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। এখানেই শেষ নয় সনদ প্রদানের শর্তে রয়েছে যে যদি কোন জেলার জেলা প্রশাসক মনে করেন উক্ত চলচ্চিত্রটি তার জেলায় প্রদর্শিত হবে না তাহলে চলচ্চিত্রটির সেন্সর সনদ থাকার পরও আপনাকে তা মেনে নিতে হবে।
সেন্সর বোর্ডের সনদ প্রপ্তির পর চলচ্চিত্রটির প্রযোজক কে যেতে হয় চলচ্চিত্র পরিবেশকের কাছে। ব্যক্তিগত পরিচয় ছাড়া কোন সিনেমা হল মালিক সরাসরি প্রযোজকের কাছ থেকে চলচ্চিত্র নেয় না। তবে দেশের মাল্টিপ্লেক্স গুলো সরাসরি প্রযোজকদের কাছ থেকেও চলচ্চিত্র নেয়।
গত ১৮ আগস্ট ২০১৯ তারিখে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি মিলে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে চলচ্চিত্র দেখানোর জন্য প্রজেকশন মেশিনের ভাড়া প্রযোজকগণ দিবেন না। তা এখনও বাস্তবায়িত না হয়ে থাকলে প্রজেকশন মেশিনের ভাড়াও প্রযোজকদের দিতে হয়। এরপর আছে বুকিং এজেন্ট। যাদের টিকিট প্রতি ৩ টাকা কমিশন দিতে হয়। একই দিনে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বুকিং এজেন্টদের কমিশনের টাকা প্রযোজকগণ দিবেন না।
তিন দশক আগেও বুকিং এজেন্ট বলে কিছু ছিল না এদেশের চলচ্চিত্রের বাজারে। তিন দশক আগেও সিনেমা হল মালিকদের সাথে প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকূশলীদের সম্পর্ক পরিবারিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। সিনেমা হল মালিকদের উত্তরসূরিগণ এই সম্পর্কের দিকে তাদের আগ্রহ দেখায়নি। সিনেমা হল থেকে মূনাফা কমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও সিনেমা হল পরিচালিত হতে থাকে উক্ত হলের কর্মচারীদের মাধ্যমে যাদের সাথে প্রযোজকদের সম্পর্ক গড়ে না উঠায় জন্ম নেয় বুকিং এজেন্ট নামে একটি দালাল চক্রের। যারা এক বা একাধিক সিনেমা হলের মালিকদের সাথে সম্পর্ক রেখে হল নিয়ন্ত্রণ করে। কথিত আছে, “এই বুকিং এজেন্টরা বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্রের নির্দিষ্ট তারকা ছাড়া অপরিচিত কোন অভিনয় শিল্পীদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনেও বাঁধা তৈরী করে”।
উপরের ঘটনা প্রবাহে এতটুকু পরিস্কার বোঝা যায় যে মাত্র ১,৪৯,২১০ বর্গকিলোমিটার (প্রায়) আয়তনের একটি দেশে মুমূর্ষ অবস্থায় বেঁচে থাকা প্রায় ১২০টি সিনেমা হলে চলচ্চিত্র পরিবেশনা এবং বিপণন কতটা ব্যয় বহুল এবং কষ্টকর। আন্তর্জাতিক মানের একটি চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবেশনা এবং বিপণন এমন কঠিন এবং ব্যয় বহুল নয়। তাই তরুণ নির্মাতা এবং প্রযোজকগণ নিজ দেশের পরিবেশনা এবং বিপণনের চাইতে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের আগ্রহ এবং চেষ্টা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হয়ত আগামী এক দশকেই এর সুফল বাংলাদেশ পেতে শুরু করবে।
বাংলাদেশের আঞ্চলিক পরিবেশনা নিয়ে আরও অনেক বিষয় আছে যা একটি লেখায় যথেষ্ট ভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। শুধু এতটুকু না বললেই নয় জেলা শহরের সিনেমা হল গুলোর দর্শকের দেয়া ১০০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে প্রযোজক অনধিক ১৫ টাকা পায়। উপজেলার সিনেমা হল গুলো থেকে কত পায় আমার জানা নেই। ই-টিকেটিং সিস্টেম না থাকায় টিকিট সেলের সঠিক সংখ্যাও প্রযোজক পর্যন্ত আসে না। মাল্টিপ্লেক্স গুলো থেকে অনধিক ৩৫ টাকা পায়। তবে সফ্টওয়ার নিয়ন্ত্রিত টিকিটিং সিস্টেম হওয়ায় মাল্টিপ্লেক্স গুলো টিকিট সেল বিষয়ক কোন প্রকার তথ্য গোপন করার অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি।
চলচ্চিত্র প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে প্রচলিত সিনেমা কাঠামো। তরুণ নির্মাতাদের পার্সনাল চলচ্চিত্রের দিকে বেশি ঝুকতে দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব চলচ্চিত্রের পরিবর্তনের সেই ছোয়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণেও চর্চা হচ্ছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র দেখার আকাঙ্খার দর্শক এবং চলচ্চিত্র সংস্কৃতি থেকে আজন্ম বিচ্ছিন্ন থাকা একটি জাতি গোষ্ঠির বেশির ভাগ দর্শক এখনও প্রস্তুত নয় সেই চলচ্চিত্র গুলো দেখার জন্য।
হতে পারে একটি নির্দিষ্ট ভুখন্ডে হয়ত নতুন চলচ্চিত্রের দর্শক যথেষ্ট নয়। কিন্তু পুরো পৃথিবী জুড়ে এর দর্শক কম নয়। তাই চলচ্চিত্র পরিবেশনা এবং বিপণনে ভাবতে হবে বর্ডারলেস দর্শকদের নিয়ে। তবেই কেবল চলচ্চিত্রের মুনাফাসহ বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। (চলবে)
বাংলা সিনেমা সাবালক হবে না? (পর্ব-০১)
- Posted by Tokon Thaakoor
- 1 comment
লিখেছেন | টোকন ঠাকুর
'আমাদের সিনেমা সাবালক হবেই না?' এই প্রশ্নও বেশ পুরনো হতে চলল। প্রশ্নের যথার্থ উত্তর আসেনি। এদিকে বাংলা সিনেমাও সাবালক হতে পারছে না, নাকি হতে চায় না?
কিম্বা এরকম কি অনুমান করা যায়, সিনেমার সাবালকত্ব কাকে বলে? সেটাই ধাবনে আসেনি, বাংলাদেশে? তাহলে সাবালকত্ব কি বিষয়? আমিও উত্তর সন্ধান করছি। এক অর্থে আমাদের সিনেমা কি এখনো স্কুল বা কলেজের 'ক্লাস পালিয়ে' শুধু অল্পবয়েসীদেরই দেখার বিষয় হয়ে থেকে গেল না? স্কুল বা কলেজের শিক্ষকের দেখার উপযোগী হলো? সমাজের নানান পেশার মানুষের দেখার পক্ষে বাংলা সিনেমা তার উপযোগিতা হারিয়েছে, নাকি সেভাবে তৈরিই হয়নি?
সমাজ বা পরিবার কাঠামোর ভেতরে সিনেমা কোনো জায়গা পেয়েছে, বলা যাবে? আজকে ক্রিকেট খেলা যেভাবে সামাজিক-পারিবারিক, লেখাপড়া-চাকরি-বাকরি বা যে-কোনোভাবেই বেঁচে থাকার যে-জীবন আমরা পার করছি একটি পচা ও গলিত রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বসে, সেখানে সিনেমার স্পেস আছে? প্রচুর সিনেমা নির্মিত হতে থাকলে সিনেমা নাবালক থেকে সাবালকত্বের দিকে যেতেই পারত। সমাজ কাঠামো কি সিনেমা নির্মাণের পক্ষে?
মানুষের জন্যে রাজনীতি, মানুষের জন্যে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ধর্ম ইত্যাদি। এবং মানুষের জন্যেই সিনেমা। রাজনীতি কি সিনেমার নিয়ন্ত্রণ চায় না? রিলিজনের রক্ষণশীলতা কি সিনেমার পক্ষে থাকতে পারে? যে দর্শক, মানুষের জন্যে সিনেমা, তার মরালিটির মধ্যে ‘সিনেমা দেখা খারাপ কিছু’ -এরকম ঢুকিয়ে দিতে থাকলে তা কি সামগ্রিকভাবে সিনেমা বিকাশের অন্তরায় হয়ে ওঠে না? আমরা ভালো সিনেমার পক্ষে থাকব আবার সিনেমার অন্তরায়গুলো আমলেই নেব না, তা কিভাবে হয়? আদিকাল থেকে মানুষ তার মুক্তির জন্যে কতকিছু করে যাচ্ছে। আর্ট সেই মুক্তির পক্ষে লড়াই জারি রেখেছে। সিনেমা বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন আর্ট।
জীবন-জীবিকা, মনে-মননে মুক্তির জন্যে সিনেমাকে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানোর সুযোগ অনেক বেশি। দুনিয়ার সিনেমা সেই দিকে গেছে, যাচ্ছে। সিনেমা সাবালক হচ্ছে, দূরে দূরে, অন্য দেশে। চিন্তায় প্রভাব বিস্তারকারী সিনেমা কত বেশি প্রয়োজন আজ! ছিচকে তরুণ-তরুণীদের উপযোগী সিনেমা হচ্ছে, হোক, আরো হোক। কিন্তু সমাজ বলতে নানান পেশার নানান বয়সের মানুষ, যেদিকে আমাদের সিনেমা ফিরে তাকানোর সময় পেল না! তরুণদের জন্যে মাদক সরবরাহ যদি দণ্ডনীয় অপরাধ হয়, তাহলে সিনেমার নাম করে উদ্ভট কাহিনীচিত্র কেন মাদক নয়? কেন আমাদের সিনেমা এখনো সাবালক হচ্ছে না?
বেশিরভাগ মানুষ আমাদের গরিব, আমরা জানি। এই যে ‘গরিব’ এটা তো একটা রাজনীতি; এই রাজনীতির কুশলীপনা নিয়ে যদি কেউ সিনেমা তৈরি করে, সেই সিনেমা রিলিজ পাবে? যাদের জীবন নিয়ে সিনেমা, তাদেরও কি উদ্ভট কাহিনীচিত্র দেখার অভ্যাস থেকে ফিরে নিজেদের জীবন দেখতে ভাল্লাগবে?
এই ‘লাগবে কি লাগবে না’ তা নিয়ে যে খুব একটা চর্চাও হয়েছে, তাও বোধ হয় বলা যাবে না। সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা শুধুমাত্র বুকের মধ্যে স্বপ্ন পোষা কোনো তরুণের একক কাজ নয়। কবিতা লেখার সঙ্গে সিনেমা নির্মাণের এই বড় পার্থক্য যে, কবিতা একা লেখার বিষয়। সিনেমা একটি দলগত প্রচেস্টা।
পুজি ও প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া সিনেমা হয় না, কবিতা তালপাতায়ও লেখা যায়। তাই কবিতা পাঠকের সামনে নিয়ে যাওয়ার আগে সেন্সর বোর্ডে যায় না, সিনেমা যায়। কিন্তু সিনেমা যত মানুষের মুখোমুখি হতে পারে তার বক্তব্য নিয়ে, কবিতা তা পারে না। অন্য ভাষাভাষী মানুষের কাছে কবিতা অনুবাদ হয়ে পৌঁছানো যতটা দুরুহ, সিনেমার সেই বাধা সাবটাইটেল করলেই নেই। আগেই বলেছি, সিনেমা প্রভাবশালী মাধ্যম। তাই সেই প্রভাব খর্ব করার চিন্তাও জারি আছে নিয়ন্ত্রকদের।
এখন কথা হচ্ছে, কী আছে? কী নেই? আর কি প্রয়োজন? জীবন যেহেতু দ্বিতীয়বারের নয়, সব প্রতিকুলতার মধ্যেও বাংলা সিনেমাকে তার নাবালকত্বের অভিযোগ ঘোচাতে হবে। পুরো সমাজকেই অংশহ্রহণ করতে হবে বা করাতে হবে। নইলে ভালো সিনেমা হবে? (চলবে)